বিশাল এক পাহাড়ের উপরে এক ঈগল বাসা বানিয়েছিলো। ঈগলের বাসায় ছিলো তার চার চারটি ডিম। প্রতিদিন সকালে সে এগুলো রেখে খাবারের খোঁজে উড়ে যেত।
একদিন ঈগল যখন বাসার বাইরে ছিলো তখন ভূমিকম্পে গোটা পাহাড় নড়ে উঠলো। এতে ঈগলের একটি ডিম বাসা থেকে ছিটকে পরে গেল। গড়াতে গড়াতে সেই ডিম এসে পড়লো পাহাড়ের নিচের এক মুরগীর বাসার উঠোনে ।
মুরগী সেই ডিমটিকে নিজের বাসায় নিয়ে এলো। অন্যান্য ডিমের সাথে রাখলো। যত্ন করে তা দিতে থাক...লো। একদিন সেই ডিম ফুটে ঈগলের একটি সুন্দর বাচ্চাও বের হলো। মুরগীর বাচ্চাদের সাথেই ঈগলের বাচ্চাটি বড় হয়ে উঠতে লাগলো।
কিন্তু সে ভেতর থেকে যে সবসময় অন্য কিছু অনুভব করতো। আকাশে একদিন ঈগলের একটা ঝাঁককে উড়ে বেড়াতে দেখে সে মুরগীকে বললো, ইস, যদি আমিও তাদের মত উড়ে বেড়াতে পারতাম। মুরগী হেসে উত্তর দিলো, তুমি কিভাবে উড়বে? তুমি তো মুরগী এবং মুরগী কখনো উড়ে না।
ঈগল মাঝে মাঝেই তার স্বগোত্রীয়দের উড়ে বেড়াতে দেখতো এবং স্বপ্ন দেখতো সেও তাদের মতই উড়ে বেড়াবে।
কিন্তু প্রতিবার সে তার স্বপ্নের কথা জানালে মুরগী বলতো যে এটা একেবারেই অসম্ভব। মুরগীর এই কথাটিই ঈগল বিশ্বাস করতে শিখলো এবং তার জীবনটা বাকী মুরগীদের মতই কাটিয়ে দিলো। অনেক দিন এভাবে কাটানোর পর একদিন সে মারাও গেল।
আসলে আমাদের জীবনেও এটা চরমতম সত্য। তুমি যা বিশ্বাস করতে শেখো একদিন তুমি তাই হয়ে উঠবে। তাই তুমি যদি ঈগলের মত উড়ার স্বপ্ন দেখো, তবে সেই স্বপ্নকেই অনুসরন করো। মুরগীর কথায় কান দিতে যেও না.
৩।অনেক বড় এক কোম্পানী হঠাৎ করে ব্যবসায় লোকসান করে বসলো।এক দুপুরে সেই কোম্পানীর কর্মচারীরা বাইরের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে ফেরার সময় অফিসের প্রবেশমুখে একটি নোটিশ দেখতে পেল।নোটিশে লেখা ছিল,
'আমাদের কোম্পানীর লোকসানের জন্য যে ব্যক্তিটি দায়ী যে গতকাল মারা গেছে।সেমিনার রুমে একটি কফিনে তার লাশ রাখা হয়েছে।যে কেউ তা দেখতে চাইলে আমন্ত্রিত।'
একজন সহকর্মীর মত্যুর খবর শুনে প্রথমে লোকেরা দুঃখ পেল।তবে এরপর তারা কৌতুহলী হয়ে উঠলো এই ভেবে যে আসলে কে হতে পারে সেই ব্যক্তি।
তারা সবাই সেমিনার রুমে এসে একত্রিত হলো,সবাই ভাবতে লাগলো,'আসলে কে সেই লোক যে আমাদের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল? তবে সে যেই হোক, এখন অন্তত সে আর বেঁচে নেই।
একে একে তারা যখন কফিনের কাছে গেল এবং ভেতরে তাকালো হঠাৎ তারা কেমন যেন বাকশূন্য হয়ে গেল, হতভম্ভ হয়ে গেল। যেন তাদের খুব আপন কারো লাশ সেখানে রাখা ছিল।
কফিনের ভেতর আসলে রাখা ছিল একটা আয়না।যেই ভেতরে তাকিয়েছিলো সে তার নিজে চেহারাই দেখতে পাচ্ছিলো।আয়নার একপাশে একটা কাগজে লেখা ছিল,
তোমার সাফল্যের পথে বাধা দিতে সক্ষম শুধুমাত্র একজনই আছে গোটা পৃথিবীতে, আর সে হচ্ছো 'তুমি' নিজে।
তুমিই সেই একমাত্র ব্যক্তি যে তোমার জীবন পরিবর্তন আনতে পারে, তোমাকে সুখী করতে পারে, তোমাকে সাহায্য করতে পারো,সুখী করতে পারো।তোমার জীবন তখন বদলে যায় না যখন তোমার অফিসের বস বদলায়,যখন তোমার অভিভাবক বদলায়,তোমার বন্ধুরা বদলায়, তোমার জীবন তখনই বদলায় যখন তুমি নিজে বদলাও।তোমার সক্ষমতা সম্পর্কে তোমার নিজের বিশ্বাসের সীমাটা যখন তুমি অতিক্রম করতে পারো, শুধু তখনই তোমার জীবন বদলায়,পূরন হয় জীবনের লক্ষ্য গুলো।। নিজের আলোয় আলোকিত করো চারপাশ।।
৪।
রূপকথার এক গ্রামের নদীর ধারে একটি ঘর ছিল যার নাম ছিল "এক হাজার আয়নার ঘর"।
সেই গ্রামে সুন্দর হাসি মাখা মুখের একটি ছোট্ট মেয়ে ছিল।মেয়েটি একদিন তার বাবা মা'র মুখে শুনতে পায়, তাদের গ্রামের "আয়না ঘর" এর কথা। এর আগে মেয়েটি কোন দিন ঘর থেকে বের হয় নি। সে প্রকৃতি দেখেনি,দেখেনি কোনও বাস্তবতা।তো সে একদিন চিন্তা করলো যে সে ঐ আয়নার ঘর দেখতে যাবে।কিন্তূ একা একা যেতে সাহস না হওয়াই সে তার সমবয়সী আরেকটি মেয়েকে সাথে নিয়ে গেলো। আয়নার ঘরের সামনে হাজির হয়ে প্রথম মেয়েটি ভাবলো যে আগে সে ঐ ঘরে ঢুকবে আর সব কিছু দেখে এসে বাইরে এলে তবেই ঐ দ্বিতীয় মেয়েটি ঢুকবে।
...কথামতো প্রথম মেয়েটি ঐ ঘরের ভেতর ঢুকলো।ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আশ্চর্য সব রঙ্গিন কারুকাজ দেখে মেয়েটির মুখ আনন্দে ভরে উঠলো।সে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে সেই একহাজার আয়নার ঘরে প্রবেশ করলো।ঘরে ঢুকেই তার চোখ ছানাবড়া। মেয়েটি দেখলো সেখানে ঠিক তারই মতো দেখতে আরও একহাজার মেয়ে হাস্যোজ্জল মুখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে যা করছে বাকিরাও ঠিক তাই তাই করছে।
মেয়েটি এবারে সব কিছু দেখে অনেক মজা পেয়ে বাইরে চলে এল এবং তার সাথীকে সব ব্যাপারে খুলে বলল এবং বলল যে "এমন সুন্দর জায়গা আমি আগে কখনো দেখেনি।সুযোগ পেলেই এবার থেকে আমি এই জায়গায় চলে আসবো।"
সব কথা শুনে এবারে দ্বিতীয় মেয়েটি কিছুটা ভয় ভয় মন নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো। ঘুরতে ঘুরতে আতংকিত মনে সেও এবারে সেই "এক হাজার আয়নার" ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে মেয়েটি ভয় পেয়ে উঠলো। ভয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো, আতঙ্কিত হয়ে উঠলো চোখ। সে খেয়াল করলো ঠিক তারই মতো দেখতে আরও এক হাজার মেয়ে আতঙ্কিত আর ভয়ার্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি যেই ভয়েতে দুই হাত তুলে বলছে -তোমারা কারা- সাথে সাথে বাকী এক হাজার মেয়েও দুই হাত তুলে ওর দিকে নজর দিচ্ছে। এবারে মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল এবং প্রথম মেয়েটিকে বলল,"শীগগিরই বাড়ি চল,এটা খুব বাজে জায়গা।আমি আর কোনওদিন এই জায়গায় আসব না"
শিক্ষাঃ জীবনটাও একটা আয়না স্বরূপ। আপনি যেভাবে জীবনকে দেখবেন, সেও ঠিক সে ভাবেই আপনার কাছে ধরা দিবে। যারা সাহসিকতা, ভালোবাসা, উৎসাহ, জয় করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, জীবন তাদের কাছে অনেক সহজ ও আনন্দ ময় হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু যারা, হতাশা, ভয়, মানসিক অবসাদ নিয়ে সামনে এগুতে চায়, তাদের চোখে সাফল্য যেন মরীচিকা । জীবন হয়ে উঠে ক্লান্তিকর, বিষণ্ণময়। বাস্তবতাকে আপনি যেভাবে দেখবেন, আপনার সামনে তা সেভাবেই ধরা দিবে।
৫।অনেক দিন আগে এক স্বার্থপর লোক ছিলো।অন্যের সম্পদে ভাগ বসানোর জন্যে সে সবসময় সুযোগ খুঁজতো। কিন্তু সে তার নিজের সম্পদের এক আনাও কারো সাথে শেয়ার করতে রাজি ছিলো না-তার বন্ধুদের সাথেও না,গরীবদের সাথেও না।
একদিন লোকটি রাস্তায় তার ত্রিশটি স্বর্ণ মুদ্রা হারিয়ে ফেললো।তার এক বন্ধু তার এই স্বর্নমুদ্রা হারানোর কথা শুনলো।সে আবার ছিলো খুব দয়ালু একজন মানুষ।
ঘটনাক্রমে বন্ধুটির মেয়ে রাস্তায় এই ত্রিশটি স্বর্নমদ্রা কুড়িয়ে পেল। সে বাড়িতে ফিরে এই কথা জানালে তার বাবা বলে যে এটা নিশ্চয় তার বন্ধুর হারিয়ে যাওয়া সেই স্বর্নমদ্রা।তাই সে লোকটির কাছে গেল তাকে মুদ্রাগুলো ফিরিয়ে দিতে।
কিন্তু তার স্বার্থপর বন্ধুটি যখন শুনলো যে তার মেয়ে এই মুদ্রা কুড়িয়ে পেয়েছে তখন সে বললো যে ‘আমার মোট চল্লিশটি স্বর্ণ মুদ্রা ছিলো।তোমার মেয়ে নিশ্চয়ই এখান থেকে দশটি মুদ্রা সরিয়েছে।আমাকে তোমার চল্লিশটি মুদ্রাই দিতে হবে।’
একথা শুনে লোকটি রেগে গেল এবং মুদ্রাগুলো সেখানে রেখে চলে গেল।কিন্তু স্বার্থপর বন্ধুটি ছিলো নাছোরবান্দা। সে বিচার নিয়ে আদালতে।
বিচারক তার অভিযোগ মন দিয়ে শুনলো এবং সেই বাবা ও তার মেয়েকে ডেকে পাঠালো।যখন তাদের নিয়ে আসা হলো তখন সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো যে সে কতটি মুদ্রা পেয়েছিলো?মেয়েটি জানালো যে ত্রিশটি স্বর্ণমুদ্রা।বিচারক আবার স্বার্থপর লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো সে কতটি মুদ্রা হারিয়েছিল?লোকটি জানালো যে ‘মোট চল্লিশটি স্বণ মুদ্রা’।
বিচারক এবার লোকটিকে জানালো যে মেয়েটি যে মুদ্রা কুড়িয়ে পেয়েছে সেগুলো তার নয় কারন মেয়েটি পেয়েছে ত্রিশটি মুদ্রা কিন্তু সে হারিয়েছে চল্লিশটি মুদ্রা। সে মেয়েটিকে এই মুদ্রাগুলো তার সাথে নিয়ে চলে যেতে বললো এবং জানালো যে যদি কেউ জানায় যে ত্রিশটি মুদ্রা হারিয়েছে তবে তাকে আবার ডেকে পাঠাবে।
বিচারক লোকটিকেও বললো যে কেউ যদি খবর দেয় যে সে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছে তবে তাকে ডেকে পাঠানো হবে।তখন সাথে সাথে স্বার্থপর লোকটি স্বীকার করলো যে সে মিথ্যা বলেছিলো এবং আসলে সে ত্রিশটি স্বর্ণমুদ্রাই হারিয়ছে।তাই তাকে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু বিচারক তার কোনো কথাই শুনলো না।
৬।একদিন ছেলেটি তার মা'র কাছে গিয়ে একটা বিল জমা দিল...
মা ছেলের দেয়া চিরকুটটা পড়লেন...
ছেলে লিখেছেঃ
১. গাছে পানি দেয়াঃ ১০ টাকা
২. দোকান থেকে এটা-ওটা কিনে দেয়াঃ ১৫টাকা
৩. ছোট ভাইকে কোলে রাখাঃ ৪০টাকা
৪. ডাস্টবিনে ময়লা ফেলাঃ ২০টাকা
৫. পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাঃ ৫০টাকা
৬. মশারী টানানোঃ ৫ টাকা
... মোটঃ ১৪০ টাকা!!
মা বিলটা পড়ে মুচকি হাসলেন...
তারপর তার আট বছরের ছেলের মুখের দিকে খানিকক্ষণ
তাকিয়ে রইলেন...
তার চোখে পানি চলে আসছে...
তিনি এক টুকরো কাগজ নিয়ে লিখতে লাগলেন....
১. তোমাকে ১০মাস পেটে ধারনঃ বিনা পয়সায়
২. তোমাকে দুগ্ধপান করানোঃ বিনা পয়সায়
৩. তোমার জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকাঃ বিনা পয়সায়
৪. তোমার অসুখ-বিসুখে তোমার জন্য দোয়াকরা, সেবা করা,
ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া,তোমার জন্য চোখের
পানি ফেলাঃ বিনা পয়সায়
৫. তোমাকে গোসল করানোঃ বিনা পয়সায়
৬. তোমাকে গল্প,গান,ছড়া শোনানোঃ বিনা পয়সায়
৭. তোমার জন্য খেলনা, কাপড় চোপড় কেনাঃবিনা পয়সায়
৮. তোমার কাথা ধোওয়া, শুকানো, বদলে দেওয়াঃ বিনা পয়সায়
৯. তোমাকে লেখাপড়া শেখানোঃ বিনা পয়সায়
১০. এবং তোমাকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসাঃ সম্পূর্ন
বিনা পয়সায় …
অতঃপর সন্তান তার মার হাত থেকে বিল টা নিয়ে নিচে ছোট্ট
করে লিখে দিল=এ বিল জীবন দিয়েও পরিশোধ করাসম্ভব নয়।
কেমন লাগল জানাবেন কিন্তু।আর ও জানা গল্প থাকলে দিবেন,আমি পোস্টে এড করে দিব।সামুতে এখন কম আসি,ব্লগিং এর আগ্রহ কেন জানি কমে যাচ্ছে।ভাল থাকবেন ধন্যবাদ..
No comments:
Post a Comment